বাংলাদেশের মাত্র ১০টি জেলার বাতাস বিশুদ্ধ! বাকি সব জেলার বাতাস স্বাস্থ্য উপযোগী নয়। দূষিত বাতাসে ভেসে বেড়ানো জীবাণুর সংক্রমণে প্রতিবছর দেশে লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। এ জন্য বিশুদ্ধ বাতাসের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এখন বাজারে এমন অনেক ডিভাইস পাওয়া যায় যেগুলোতে বিশুদ্ধ বাতাসের নিশ্চয়তা মেলে।
বিস্তারিত জানাচ্ছেন আতিফ আতাউর।

বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের তথ্য মতে, গত জানুয়ারি মাসে বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান শীর্ষে ছিল আট দিন। জানুয়ারির ২০ দিনের মধ্যে ১১ দিনই ঢাকা বায়ুদূষণের তালিকায় এক নম্বরে ছিল। এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন মতে, বায়ুদূষণের কারণে দেশের মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। আর ঢাকায় গড় আয়ু কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস।

স্বাস্থ্য সতর্কতা না থাকার কারণে প্রতিবছর বায়ুদূষণজনিত রোগে প্রায় দেড় লাখ মানুষ মারা যায়।এই যখন অবস্থা তখন মড়ার ওপর খাঁড়া ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে বাতাসে ভেসে বেড়ানো করোনাভাইরাসের জীবাণু। বাতাসে ভেসে থাকা জীবাণু থেকে দূরে থাকতে ব্যবহার করতে হচ্ছে মাস্ক। তাও আবার কেউ পরছেন, তো কেউ করছেন থোড়াই কেয়ার।

তাহলে কী করোনা বা বাতাসে ভেসে বেড়ানো বিভিন্ন ভাইরাস ও ক্ষতিকর উপাদান থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়? এই প্রশ্নের সমাধান এনে দিয়েছে আধুনিক ডিজিটাল ডিভাইস। দক্ষিণ কোরিয়ায় তৈরি ওয়েলিস এয়ার অ্যান্ড সারফেস ডিসইনফেকট্যান্ট সলিউশনটি এরই মধ্যে করোনা মহামারিকালে ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন উন্নত দেশের হাসপাতাল, হাসপাতালের ওটি-আইসিইউ, ব্যাংক, অফিস, কল-কারখানা, স্কুল ও বাসায় ব্যবহূত হচ্ছে। যন্ত্রটির কার্যকারিতার সুফল পেয়ে প্রশংসাও করেছেন অনেকেই।

এখন বাংলাদেশেও পাওয়া যাচ্ছে যন্ত্রটি। এটি ব্যবহারের ফলে করোনার আতঙ্ক থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যাবে। বাড়ি, অফিস রুম, শোরুমের মতো নানা স্থান ভাইরাসমুক্ত রাখতে ইলেকট্রনিক যন্ত্রটি ব্যবহার করতে পারেন।

বায়ু বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র বাতাসের নানা জীবাণু নাশ করে

পৃথিবীর অনেক দেশ এরই মধ্যে এই প্রযুক্তিসেবা যন্ত্রটির ব্যবহার শুরু করেছে। অফিস, হাসপাতাল, ব্যাংক ও বাসাবাড়িতে ব্যবহূত হচ্ছে এই যন্ত্র। এটি সহজেই বহন করা যায়। আবার পরিবেশবান্ধবও। যন্ত্রটির ব্যবহার আপনার পরিবারকে যেকোনো ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে সার্বক্ষণিক সুরক্ষা দেবে।

কতটা কার্যকর

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ অ্যান্ড সায়েন্স ( IJOER ) ২০২০ সালের এপ্রিলে ওয়েলিসের করোনাভাইরাসবিনাশী সক্ষমতার ওপর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ওয়েলিস ৯৯.৯৯% কার্যকর। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের FDA -এর অধীন MRI-Global এই ডিভাইসের কার্যকারিতার স্বীকৃতি দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক বিভাগীয় প্রধান (কার্ডিওভাসকুলার সার্জারি) ডা. এস এ এম আব্দুস সবুরের মতে, ডিভাইসটি ওটি-আইসিইউর মতো জায়গায় বিশেষভাবে কার্যকর। ওটি ও আইসিইউর যেকোনো ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করে থাকে।

যন্ত্রটির ব্যবহার রোগীর অপারেশন-পরবর্তী সময়ের ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে। ইবনে সিনা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. মো. ফেরদৌস খানের মতে, যন্ত্রটি দৈনন্দিন জীবনেও ব্যবহার উপযোগী। বিশুদ্ধ বাতাস পেতে এবং অ্যাজমা-অ্যালার্জিজনিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে এটি।

অনেকের মনেই জিজ্ঞাসা, এয়ার পিউরিফায়ার চালু রেখে ঘুমানো যাবে কি না। উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ। এটি সচল রেখে আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন। কেউ কেউ মনে করেন, এটি বাতাসকে আর্দ্র করে ফেলে। না, এটি বাতাস থেকে জলীয় বাষ্প শুষে নেয়। এয়ার পিউরিফায়ারের কাজ বাতাস থেকে ক্ষতিকর উপাদান ও ভাইরাস দূর করা।

ব্যবহারবিধি

* চারপাশে ফাঁকা রয়েছে এমন স্থানে এয়ার পিউরিফায়ার স্থাপন করুন। এতে চারপাশের বাতাস সঞ্চালন করা যন্ত্রটির জন্য সহজ হবে।

* বিভিন্ন মডেল ও আকৃতির এয়ার পিউরিফায়ার কিনতে পাওয়া যায়। আপনার ব্যবহারের স্থান, প্রয়োজনীয়তা ও জায়গার ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট মডেল ও আকৃতির এয়ার পিউরিফায়ার কিনুন।

* রুম যদি বড় হয় তাহলে এমন স্থানে পিউরিফায়ার স্থাপন করুন, যেখান থেকে সবচেয়ে বেশি জায়গায় বাতাস পৌঁছায়।

* রুমের আয়তন কম হলে সুবিধাজনক যেকোনো স্থানেই এটি রাখতে পারেন। এটি রাখার সময় দেয়াল ও পিউরিফায়ারের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখুন।

* ভালো ফলাফল পেতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহারের সময় রুমের দরজা ও জানালা বন্ধ রাখুন।

* নির্দিষ্ট সময় পর পর এয়ার পিউরিফায়ারের ফিল্টার বদলে নিন। এতে দীর্ঘদিন যন্ত্রটি থেকে ভালো সুবিধা পাবেন।

* সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে আপনার এয়ার পিউরিফায়ারের গাউডবুকে দেওয়া নির্দেশনাগুলো মেনে চলুন।

ওয়েলিসের উল্লেখযোগ্য দিক

১. যন্ত্রটি মানুষের উপস্থিতিতে সার্বক্ষণিক জীবাণুমুক্ত করে।

২. শুধু বাতাস নয়, বস্তুপৃষ্ঠকেও জীবাণুমুক্ত করে, যা শিল্প ও কল-কারখানার পরিবেশ ও কর্মীদের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।

৩. যন্ত্রটির অত্যাধুনিক প্রযুক্তি মানবদেহের শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশকারী ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করে।

৪. এতে ব্যয়বহুল ফিল্টার ও ইউভি লাইট ব্যবহূত হয় না।

৫. আকারে ছোট ও সহজে বহনযোগ্য।

 

কলমকথা/সাথী